২২.৮.১৮

শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু কে ছিলেন ????

 শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু কে ছিলেন ?

➡ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬ – ১৫৩৪) ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক। তিনি অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ তাকে শ্রীকৃষ্ণের পূর্ণাবতার মনে করেন। শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ছিলেন ভাগবত পুরাণ ও ভগবদ্গীতা-য় উল্লিখিত দর্শনের ভিত্তিতে সৃষ্ট বৈষ্ণব ভক্তিযোগ মতবাদের একজন বিশিষ্ট প্রবক্তা।তিনি বিশেষত রাধা ও কৃষ্ণ রূপে ঈশ্বরের পূজা প্রচার করেন এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রটি জনপ্রিয় করে তোলেন। সংস্কৃত ভাষায় শিক্ষাষ্টক নামক প্রসিদ্ধ স্তোত্রটিও তারই রচনা। গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতানুসারে, ভাগবত পুরাণের শেষের দিকের শ্লোকগুলিতে রাধারানির ভাবকান্তি সংবলিত শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য রূপে অবতার গ্রহণের কথা বর্ণিত হয়েছে।

চৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্বাশ্রমের নাম 'গৌরাঙ্গ', বা 'নিমাই'। তার গাত্রবর্ণ স্বর্ণালি আভাযুক্ত ছিল বলে তাকে 'গৌরাঙ্গ' নামে অভিহিত করা হত;অন্যদিকে, নিম বৃক্ষের নিচে জন্ম বলে তার নামকরণ হয়েছিল 'নিমাই'। ষোড়শ শতাব্দীতে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী সাহিত্য বাংলা সন্তজীবনী ধারায় এক নতুন যুগের সূচনা ঘটিয়েছিল। সেযুগে একাধিক কবি চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী অবলম্বনে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর #চৈতন্য_চরিতামৃত, বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের #চৈতন্য_ভাগবত, এবং লোচন দাস ঠাকুরের #চৈতন্যমঙ্গল।

👏🌻 শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর আর্বিভাবঃ 👏🌻

চৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি দোলপূর্ণিমার রাত্রে চন্দ্রগ্রহণের সময় নদিয়ার নবদ্বীপে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম।তাঁর পিতামাতা ছিলেন অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত নবদ্বীপের অধিবাসী জগন্নাথ মিশ্র ও শচী দেবী। চৈতন্যদেবের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ওড়িশার জাজপুরের আদি বাসিন্দা। তাঁর পিতামহ মধুকর মিশ্র ওড়িশা থেকে বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন।

চৈতন্যদেবের পিতৃদত্ত নাম ছিল বিশ্বম্ভর মিশ্র। প্রথম যৌবনে তিনি ছিলেন স্বনামধন্য পণ্ডিত। তর্কশাস্ত্রে নবদ্বীপের নিমাই পণ্ডিতের খ্যাতি ছিল অবিসংবাদিত। জপ ও কৃষ্ণের নাম কীর্তনের প্রতি তাঁর আকর্ষণ যে ছেলেবেলা থেকেই বজায় ছিল, তা জানা যায় তাঁর জীবনের নানা কাহিনি থেকে। কিন্তু তাঁর প্রধান আগ্রহের বিষয় ছিল সংস্কৃত গ্রন্থাদি পাঠ ও জ্ঞানার্জন। পিতার মৃত্যুর পর গয়ায় পিণ্ডদান করতে গিয়ে নিমাই তাঁর গুরু ঈশ্বর পুরীর সাক্ষাৎ পান। ঈশ্বর পুরীর নিকট তিনি গোপাল মন্ত্রে দীক্ষিত হন। এই ঘটনা নিমাইয়ের পরবর্তী জীবনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। বাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর পণ্ডিত থেকে ভক্ত রূপে তাঁর অপ্রত্যাশিত মন পরিবর্তন দেখে অদ্বৈত আচার্যের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় বৈষ্ণব সমাজ আশ্চর্য হয়ে যান। অনতিবিলম্বে নিমাই নদিয়ার বৈষ্ণব সমাজের এক অগ্রণী নেতায় পরিণত হন।

কেশব ভারতীর নিকট সন্ন্যাসব্রতে দীক্ষিত হওয়ার পর নিমাই শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য নাম গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তিনি জন্মভূমি বাংলা ত্যাগ করে কয়েক বছর ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থান পর্যটন করেন। এই সময় তিনি অবিরত কৃষ্ণনাম জপ করতেন। জীবনের শেষ চব্বিশ বছর তিনি অতিবাহিত করেন জগন্নাথধাম পুরীতে। ওড়িশার সূর্যবংশীয় হিন্দু সম্রাট গজপতি মহারাজা প্রতাপরুদ্র দেব চৈতন্য মহাপ্রভুকে কৃষ্ণের সাক্ষাৎ অবতার মনে করতেন। মহারাজা প্রতাপরুদ্র চৈতন্যদেব ও তাঁর সংকীর্তন দলের পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিলেন। ভক্তদের মতে, জীবনের শেষপর্বে চৈতন্যদেব ভক্তিরসে আপ্লুত হয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতেন এবং অধিকাংশ সময়েই ভাবসমাধিস্থ থাকতেন।

👏🌹 অবতারত্ব 👏🌹

ভগবানের সঙ্গে প্রেমময়ী সম্পর্ক সমন্ধে শিক্ষা দান করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই দ্বাপরের অব্যবহিত কলিযুগের প্রথম সন্ধ্যায় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপে নদীয়াতে প্রকাশিত হন । শুদ্ধভক্তিতে ভগবান আকৃষ্ট হন । শুদ্ধভক্ত ভগবানের প্রতি আকৃষ্ট । কেউ যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রকৃতির প্রতি আকৃষ্ট না হয়, তা হলে সে অবশ্যই জড়সুখভোগের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং পাপ-পুণ্যের কর্মফলের প্রতি আবদ্ধ হয়ে একের পর এক জড় দেহ ধারণ করে জাগতিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে । কৃষ্ণচেতনাই জীবনের পরম পুর্ণতা । সেজন্য বদ্ধ জীবদের মধ্যে শুদ্ধ কৃষ্ণভক্তি চেতনা প্রদানের জন্য ভক্তিভাব অবলম্বন করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃষ্ণচৈতন্য রূপে অবতীর্ণ হন ।

মহাভারতের দানধর্মে, বিষ্ণুসহস্রনাম স্তোত্রে পরমেশ্বর ভগবানের রূপগুনের বর্ণনা করা হয়েছে, এভাবে —-

সুবর্ণবর্ণো হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী ।
সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠাশান্তিপরায়ণঃ ।।

সুবর্ণবর্ণ- সোনার মতো উজ্জল অঙ্গকান্তি, হেমাঙ্গ- শুধু সোনার মতো নয়, তপ্ত বা গলিত সোনার মতো অঙ্গ, বরাঙ্গ- অপূর্ব সর্বাঙ্গসুন্দর রূপ, চন্দনাঙ্গদী—চন্দনে চর্চিত অঙ্গ , সন্ন্যসকৃৎ– সন্ন্যাস আশ্রম গ্রহণকারী, শম— শমগুণ সম্পন্ন, শান্ত—ধীর, কৃষ্ণভক্তি ব্যতীত অন্য বিষয়ে উদাসীন, নিষ্ঠা— ভক্তির পরম আশ্রয় । এই সমস্ত বর্ণণা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুকেই নির্দেশ করে ।

শ্রীমদ্ভাগবতে একাদশ স্কন্ধে পঞ্চম অধ্যায়ের একত্রিশ শ্লোকে কলিযুগের আরাধ্য ভগবান সমন্ধে বর্ণণা রয়েছে —

“কলিযুগে যারা সুবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যাক্তি, তাঁরা অবশ্যই নাম সংকীর্তন যজ্ঞ দ্বারা, সেই কৃষ্ণ যিনি অ-কৃষ্ণ বা গৌররূপে আবির্ভুত হয়েছেন, তাঁর আরাধনা করবেন । সেই ভগবান সর্বদা তাঁর পার্ষদ, সেবক, সংকীর্তন অস্ত্র ও ঘনিষ্ঠ সহচর পরিবৃত থাকেন ।”
উপপুরাণে শ্রীব্যাসদেবের প্রতি শ্রীহরির উক্তি এরকম—“হে ব্রাহ্মন । কখনও কখনও অবশ্যই আমি কলিযুগের অধঃপতিত পাপী মানুষদের হরিভক্তি প্রদান করবার জন্য সন্ন্যাস-আশ্রম অবলম্বন করি ।”

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন-প্রদত্ত দিব্যনাম কীর্তনের পন্থা কেবল সহজসাধ্যই নয়, পারমার্থিক পুর্ণতা লাভের, জীবনের চরম সার্থকতা লাভের জন্য যত আধ্যাত্মিক পন্থা আছে, প্রেমপুর্ণ এই পন্থা তাঁর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোত্তম । ভক্তিযোগের সর্বোচ্চ পন্থা কেবল ভগবানই প্রদান করতে পারেন — অন্য কেউ নয়, আর এজন্য ভগবান স্বয়ং ভক্তরূপে অবতীর্ণ হন । তিনিই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ।

জয় শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু :)
<3 হরে কৃষ্ণ <3

collected

1 টি মন্তব্য:

  1. হরে কৃষ্ণ আমার একটু প্রশ্ন জাগছে মনে।
    তাহলে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কি পরম ব্রহ্ম ? ।

    উত্তরমুছুন