২৪.১১.২০

দেখুন সনাতন ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা কী

 দেখুন সনাতন ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রসঙ্গে মনুসংহিতায় কি বলেছে------




#সনাতন_ধর্মে_নারীর_অধিকার_ও_মর্যাদা_প্রসঙ্গে_মনুসংহিতা


বৈদ্যিক সনাতন ধর্মে যতগুলো শাস্ত্রীয় গ্রন্থ আছে তাদের মধ্যে অন্যতম মনু স্মৃতি। এর কারণ বিবিধ তবে সারমর্মে বলা যায় তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ী ও যবনদের দ্বারা বিকৃত ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য নিজের মতো করে অপব্যাখ্যা সৃষ্টি করাই এর প্রধান কারণ। অনেক অপপ্রচার কথিত আছে যে মনু ছিলেন নারী বিদ্বেষী এবং বিভিন্নভাবে নারীদের হেয় করেছেন। তাহলে আমরা দেখে নিই কিভাবে মিথ্যা ভ- প্রচারকরা মনু স্মৃতিকে হেয় করেছে। যদি আমরা প্রকৃত অবিকৃত মনু স্মৃতি পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে মনু স্মৃতিতে নারীকে অধিকতর উঁচু মর্যাদা দিয়েছে। এমনকি আধুনিক যুগে নারীবাদীদের গ্রন্থগুলোকে পুনঃ সংকলন করার প্রয়োজন পরে যাবে মনু স্মৃতির সমকক্ষ হওয়ার জন্য।

👉👉যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।

যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ।। (মনুসংহিতা ৩/৫৬)

অর্থাৎ“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।”

এটি নারীদের প্রতি কোন চাটুকারিতা বা তোষামদি নয়। এটি এমন একটি সত্য যা নারীবিদ্বেষীদের কাছে বিষের মতো, আর নারীশক্তির মহিমা কীর্তনীয়াদের কাছে অমৃতস্বরূপ। প্রকৃতির এই নিয়ম পরিবার, সমাজ, ধর্মগোষ্ঠী, জাতি বা সমগ্র মানবতার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যারা মনুস্মৃতিকে দোষারোপ করেন, তারা কখনোই এই শ্লোকের উদ্ধৃতি দেন না। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুধুমাত্র হিন্দুধর্ম সম্পর্কে কুৎসা প্রচারই তাদের একমাত্র কাজ। নিরপেক্ষ বিচার তাদের কাছে নেই। যেমন নিচের চমৎকার শ্লোকগুলোর কথা কোন হিন্দুধর্মের সমালোচক উল্লেখ করেন না:


👉👉 একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রাতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন”। (মনুসংহিতা ৩/৫৫)


👉👉যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭)

ভেবে দেখুন, পরিবারের সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির জন্য এর চেয়ে বড় কথা আর কি হতে পারে? এখানে পুরুষতান্ত্রিকতা চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। নারীকে সর্বদা সুখী রাখতে হবে -এটাই মহর্ষি মনুর নির্দেশ।

👉👉যে স্বামী তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখে না, সে তার সমগ্র পরিবারের জন্য দুর্দশা বয়ে আনে। আর যদি স্ত্রী পরিবারের প্রতি সুখী থাকেন, তবে সমগ্র পরিবার শোভাময় হয়ে থাকে।” (মনুসংহিতা ৩/৬২)


👉👉যে বংশকে উদ্দেশ্য করে ভগিনী, পত্নী, পুত্রবধূ প্রভৃতি স্ত্রীলোকেরা অনাদৃত, অপমানিত বা বৈষম্যের শিকার হয়ে অভিশাপ দেন, সেই বংশ বিষপান করা ব্যক্তি ন্যায় ধন-পশু প্রভৃতির সাথে সর্বতোভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।” (মনুসংহিতা ৩/৫৮)


👉👉 পুরুষতান্ত্রিক যে সমাজে নারীনির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, নারীকে যথেচ্ছা সম্ভোগ, প্রহার বা তাড়িয়ে দেওয়ার বিধানও যে সমাজ অনুমোদন করে, সেই সমাজ যে ক্রমেই বিনাশপ্রাপ্ত হবে -এটাই তো স্বাভাবিক। বিশ্বের প্রতিটি নারীর ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের লক্ষ্যে, নারীর অপমান ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহর্ষি মনু যে দৃপ্ত বাণী উচ্চারণ করেছেন, তাতে তো মনুকে বরং কট্টর নারীবাদী বলেই মনে হয়, তাই না?

“যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন দ্বারা খুশী রাখবে এবং উত্তম অলংকার, পোশাক ও খাদ্যদ্বারা প্রীত রাখবে। স্ত্রীজাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে।” (মনুসংহিতা ৩/৫৯)

শ্লোকটিকে খুব নারীবাদী মনে হতে পারে, তবে মহর্ষি মনু মোটেও পুরুষতান্ত্রিক বা নারীবাদী কোনটাই নন, তিনি মানবতাবাদী। মনে রাখবেন ‘মনু’ শব্দ থেকেই ‘মানব’ ও ‘মানবতা’ শব্দের উৎপত্তি।


👉👉স্ত্রী লোকেরা সন্তানাদি প্রসব ও পালন করে থাকে। তারা নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তারা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তারাই গৃহের শ্রী।” (মনুসংহিতা ৯/২৬)

আজও ভারতবর্ষে মহর্ষি মনুর এই শ্লোক থেকেই শিক্ষা নিয়ে মেয়েদের ‘ভাগ্যশ্রী’, ‘ঘরের লক্ষ্মী’ বা ‘গৃহলক্ষ্মী’ বলা হয়।


👉👉প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে স্ত্রীরাই সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উৎপাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই নিষ্পন্ন হয়ে থাকে।” (মনুসংহিতা ৯/২৮)


অন্যকথায়, মাতৃরূপে, কন্যারূপে, স্ত্রীরূপে, ভগ্নীরূপে কিংবা ধর্মকর্মে অংশীদাররূপে নারীরাই সকল কল্যাণের মূল উৎস বলে মহর্ষি মনু প্রতিপাদন করেছেন।

👉👉পতি ও পত্নী মৃত্যু পর্যন্ত একসাথে থাকবেন। তারা অন্য কোন জীবনসঙ্গী গ্রহণ করবেন না বা ব্যাভিচার করবেন না। এই হলো নারী-পুরুষের পরম ধর্ম।” (মনুসংহিতা ৯/১০১)


👉👉নারী ও পুরুষ একে ভিন্ন অপরে অসম্পূর্ণ। এজন্য বেদে বলা হয়েছে ধর্মকর্ম পত্নীর সাথে মিলিতভাবে কর্তব্য”। (মনুসংহিতা ৯/৯৬)

এই শ্লোকটির কথা একবার ভেবে দেখুন। নারী ছাড়া পুরুষ অসম্পূর্ণ একথা শুধুমাত্র হিন্দুধর্মই বলে থাকে। নারী ছাড়া পুরুষের ধর্মকর্ম সম্পূর্ণ হয় না। বৈদিক যজ্ঞ ও ধর্মপালন স্বামী-স্ত্রী যুগ্মভাবে করতে হয়, কেউ একাকী করতে পারেন না। একারণেই নারীকে বলা হয় পুরুষের ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ও ‘সহধর্মিনী’। উল্লেখ্য, মনুসংহিতাই একমাত্র ধর্মশাস্ত্র যেখানে এই বিখ্যাত কথা দুইটি অনুমোদন করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই হিন্দুধর্মে বিবাহবিচ্ছেদ এবং বহুবিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

এবার নারীদের স্বাতন্ত্রের কথায় আসা যাক। স্মর্তব্য, স্বাধীনতা মানে উচ্ছৃঙ্খলা নয়, স্বাতন্ত্র্য মানেই ঔদ্ধত্য নয়।

👉👉যে স্ত্রী দুঃশীলতা হেতু নিজে আত্মরক্ষায় যত্নবতী না হয়, তাকে পুরুষগণ ঘরে আটকে রাখলেও সে ‘অরক্ষিতা’ থাকে। কিন্তু যারা সর্বদা আপনা-আপনি আত্মরক্ষায় তৎপর, তাদের কেউ রক্ষা না করলেও তারা ‘সুরক্ষিতা’ হয়ে থাকে। তাই স্ত্রীলোকদের আটকে রাখা নিষ্ফল। স্ত্রীজাতির নিরাপত্তা প্রধানত তাদের নিজস্ব সামর্থ্য ও মনোভাবের উপর নির্ভরশীল।” (মনুসংহিতা ৯/১২)

এই শ্লোকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, নিরাপত্তার নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখা নিষ্ফল। বিপরীতক্রমে তাকে নিরাপদ রাখতে হলে তাকে অধিকার দিতে হবে এবং সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা প্রদান করতে হবে। নারীর সামর্থ্য ও প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করতে হবে, মানবিক বিকাশ সাধনে তৎপর হতে হবে, যার ফলশ্রুতিতে তারা যেন আত্মরক্ষায় তৎপর থাকেন, নিজেদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। নারী জাতি সম্পর্কে এই হলো মহর্ষি মনুর মতাদর্শ।এটা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয় যে আমাদের গৌরবের এমন ইতিহাসের ভিত্তি থাকা সত্ত্বেও আমাদের নারীরা চার দেয়ালের মাঝে অত্যাচারিত হয় নয়তো লম্পটের লালসার স্বীকার হয়। আমরা যদি আমাদের মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষার দ্বায়িত নেবার পরিবর্তে আমরাই যদি নারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ি অথবা আক্রমণকারীদের প্রতিহত না করি তাহলে আমাদেরকে সাহায্য করতে আসবে!


👉👉নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩২৩)

👉👉যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৯/২৩২)

👉👉যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।” (মনুসংহিতা ৮/৩৫২)

ইভটিজিং এখন প্রধান একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে, যার বিরুদ্ধে কঠোর কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেই। কিন্তু ইভটিজিং, অপহরণ ও ধর্ষণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান কিন্তু সেই মনুর যুগ থেকেই প্রচলিত ছিল।


👉👉যদি কেউ মা, স্ত্রী বা কন্যার নামে মিথ্যা দোষারোপ করে তবে তাকে শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৮/২৭৫)

অথচ নারীকে এই মিথ্যা দোষারোপ করেই প্রতিবছর হাজার হাজার নারীকে ‘অনার কিলিং’ করা হয়। অর্থাৎ হিন্দুধর্মের বিপরীত বিধানও অনেক সমাজে প্রচলিত আছে।

👉👉যদি কেউ কোন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া মা, বাবা, স্ত্রী বা সন্তান ত্যাগ করে, তাকে কঠিন দণ্ড দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩৮৯)

👉👉যদি কোন নারীকে সুরক্ষা দেবার জন্য পুত্র বা কোন পুরুষ পরিবারে না থাকে, অথবা যদি সে বিধবা হয়ে থাকে, যে অসুস্থ অথবা যার স্বামী বিদেশে গেছে, তাহলে রাজা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। যদি তার সম্পত্তি তার কোন বন্ধু বা আত্মীয় হরণ করে, তাহলে রাজা দোষীদের কঠোর শাস্তি দেবেন এবং সম্পত্তি ঐ নারীকে ফেরত দেবেন।” (মনুসংহিতা ৮/২৮-২৯)


👉👉নববিবাহিতা বধূ, কন্যা এবং গর্ভবতী মহিলাদের অতিথি ভোজনের পূর্বেই ভোজন প্রদান করতে হবে।” (মনুসংহিতা ৩/১১৪)

👉👉বাহনে বা যানে আরোহী ব্যক্তির পক্ষে বয়স্ক ব্যক্তি, ক্লান্ত ব্যক্তি, ভারবাহী ব্যক্তি, বর, রাজা, স্নাতক এবং স্ত্রীলোকদের পথ ছেড়ে দেয়া কর্তব্য।” (মনুসংহিতা ২/১৩৮)


👉👉 অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়, স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনায়, আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, পুষ্টি এবং গৃহের সকল প্রকার ব্যবস্থাপনায় নারীদের স্বায়ত্তশাসন ও কর্তৃত্ব প্রদান করতে হবে। (মনু স্মৃতি: ৯.১১)


এই শ্লোকের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যারা মনে করত যে কোনো বৈদিক ধর্মকর্ম নারীরা করতে পারবে না তা সম্পূর্ণ ভুল ও মিথ্যা ধারণা পোষণকারী। উপরন্তু নারী পুরুষ উভয়কেই এই ধর্মীয়নুষ্ঠান পালন করতে হবে। তাই যারা দাবি করে অথবা পরামর্শ দেয় যে নারীদের বেদ অধ্যায়ন ও চর্চা করার অধিকার নেই তারা মনু ও বেদ বিরোধী। এই ধরনের অন্ধ গোঁড়ারা জাতীর দুঃখ দুর্দশার কারণ। তাই আমরা এই ধরনের মনোভাবকে কখনোই প্রশয় দেব না যা নারীদের হেয় করে।


👉👉 এমনকি দুর্বল স্বামীকেও তার স্ত্রীকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে।(মনু স্মৃতি: ৯.৬)

👉👉নারী সর্বদা সকল প্রকার অসচ্চরিত্রতা, অনৈতিকতা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। কারণ নারী যখন চরিত্র হারায় তখন পুরো সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়।(মনু স্মৃতি: ৯.৫)

👉👉 একজন নারীকে সর্বদা নিশ্চিত হতে হবে যে সে নিরাপদে আছে। তাকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রদান করার দ্বায়িত তার পিতা, স্বামী ও পুত্রের উপর বর্তায়।(মনু স্মৃতি: ৫.১৪৯) 

লক্ষ্য করে দেখুন এখানে নিরাপত্তা বলতে কিন্তু বন্দি বা চার দেয়ালের মাঝে আবদ্ধ করে রাখার কথা বলা হচ্ছে না।

👉👉 কোনো অযোগ্য ব্যক্তির কাছে জোরপূর্বক বিবাহ না দিয়ে বরং কন্যাকে অবিবাহিত রাখাই শ্রেয়।(মনু স্মৃতি: ৯.৯৮)

👉👉প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরে নারী তার নিজের জীবন সঙ্গী নিজে পছন্দ করে বেছে নিতে পারবে। যদি তার পিতা-মাতা তার জন্য যোগ্য পাত্র সন্ধানে ব্যর্থ হয় তাহলে সে নিজেই নিজের পাত্র বেছে নেবে। তাই কন্যার জীবন সঙ্গী নির্ধারণ করবে তার পিতামাতা এই ধারণা মনু বিরুদ্ধ, একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারীর পূর্ণ অধিকার রয়েছে তার জীবনসঙ্গী বেছে নেবার। পিতামাতা বিবাহের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী নয়।(মনু স্মৃতি: ৯.৯০-৯১) 

👉👉 একজন কন্যা একজন পুত্রের সমতুল্য। তার বর্তমানে কিভাবে সম্পত্তির উপর তার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে।(মনু স্মৃতি: ৯.১৩০)

👉👉মায়ের ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর কেবল শুধুমাত্র কন্যারই অধিকার আছে।(মনু স্মৃতি: ৯.১৩১) 

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, মনুর মতে একজন কন্যার পিতার সম্পত্তির উপর তার ভাইয়ের মতো সমান অধিকার আছে এবং তার মায়ের সম্পত্তির উপর শুধুমাত্র তারই অধিকার আছে অন্য কারো নয়।

নারীর প্রতি এই বিশেষ ব্যবস্থার কারণ হচ্ছে যাতে করে নারী কোনো অবস্থায় অন্যের উপর নির্ভর করতে না হয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সুখী আলোকিত নারীকূলই সুখী সমাজের ভিত্তি গড়ে দেয়

👉👉 যদি কোনো ব্যাক্তির স্ত্রী অথবা সন্তান না থাকে তাহলে তার সম্পত্তি তার ভাই-বোনদের মাঝে সমান ভাগে ভাগ করে দেবে। যদি জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা তার ভাই বোনদের মাঝে প্রাপ্য অংশ প্রদান করতে অস্বীকৃত জানায় তাহলে আইন অনুযায়ী সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

নারীর সুরক্ষা বিধান নিশ্চিত করার জন্য মনু আরও কঠোরতর শাস্তি বিধানের পরামর্শ দিয়েছেন তাদের উপর যারা নারীর সম্পত্তি হনন করার চেষ্টা করবে, এমনিকি সে তাহার নিকট আত্মীয় হলেও তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।(মনু স্মৃতি: ৯.২১২-২১৩)


এই মানবিক ভদ্রতা জ্ঞানটুকু আর কোন শাস্ত্রে আছে? Ladies First তত্ত্বটা কিন্তু তাহলে বিদেশী নয়, বরং ভারতীয় রীতি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

ভেবে দেখুন, পথে-ঘাটে যত অনাথ শিশু দেখেন, যত নিশিকন্যা দেখেন, যত পিতৃ-মাতৃতুল্য বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাকে হাত পেতে ভিক্ষা করতে দেখেন, তাদের মাঝে কতজনকে আপনি হিন্দু দেখেছেন? হিন্দুদের মানবিক মূল্যবোধ অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয় কি? নিজেই বিচার করুন।


Collected

সনাতন ধর্মের নাম কোথায় আছে ও তার প্রবর্তক কে দেখুন ??

         আমাদের ধর্মের নাম নাকি কোনো শাস্ত্রে নেই ।। দেখুন 


অন্য ধর্মাবলম্বীরা সনাতনীদের কিছু কমন প্রশ্ন করে। আবার মাঝে মাঝে নিজের ধর্মীয় গ্রন্থের রেফারেন্স দিয়ে নিজেদের বড় ও সনাতনকে ছোট দেখানোর তালে থাকে। চলুন আজ তাদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক........


১. আমাদের ধর্মের নাম যে সনাতন তার উল্লেখ নাকি আমাদের কোনো ধর্মীয় গ্রন্থে না! আসলেই কী তাই.......

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রারম্ভে অর্জুন তাঁর বিপক্ষে নিজের আত্মীয়দের দেখে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,


Unnamed (1)

কুলক্ষয়ে প্রণশ্যন্তি কুলধর্মাঃ সনাতনাঃ।

ধর্মে নষ্টে কুলং কৃৎস্নমধর্মোহভিভব ত্যুত।।

(গীতা-১/৪০)

অর্থাৎ নিজেদের কুলকে বিনাশ করলে আমাদের কুলধর্ম সনাতন নষ্ট হয়ে যাবে। তখন আমাদের সম্পূর্ণ কুলে বহুপ্রকারে পাপ প্রবেশ করবে। 

এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অর্জুন বলেছেন তাঁদের কুল ধর্ম হচ্ছে সনাতন। এবং নিজেরা নিজেদের বিনাশ করলে সনাতন ধর্মের ক্ষয় হবে এবং কুলে পাপ প্রবেশ করবে।

মনুসংহিতার ৪/১৩৮ এ বলা হয়েছে,

সত্যং ব্রৃয়াৎ প্রিয়ং ব্রৃয়ান্ন ব্রৃয়াৎ সত্যমপ্রিয়ম্।

প্রিয়ঞ্চ নানৃতং ব্রৃয়াদেষ ধর্মঃ সনাতনঃ।।

অর্থাৎ সত্যকথা বলবে, প্রিয় বাক্য বলবে, কিন্তু সত্য কথাও যদি শ্রোতার মর্মভেদী অপ্রিয় হয় তা বলবে না; আবার মিথ্যা প্রিয় বাক্য বলবে না। - এই গলো বেদোপদিষ্ট সনাতন ধর্ম।

আবার মনুসংহিতার ১/২২-২৩ এ বলা আছে, "যজ্ঞঞ্চৈব সনাতনম" ও "ব্রহ্ম সনাতনম" অর্থাৎ যজ্ঞ হচ্ছে সনাতন এবং ব্রহ্ম হচ্ছে সনাতন।

অর্থাৎ আমাদের ধর্ম সনাতন, আমাদের যজ্ঞরূপ কর্ম সনাতন এমনকি ঈশ্বরও সনাতন।

২. সনাতন ধর্মের প্রবর্তক কে? এটা হচ্ছে তাদের আরেকটি প্রশ্ন।

প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, প্রবর্তক কাকে বলে? যিনি কিছু কোনো প্রবর্তন অর্থৎ চালু করেন তাকে প্রবর্তক বলে। যদি অন্য ধর্মের প্রবর্তক থাকে তাহলে এটাই স্পষ্ট হয় যে, এই ধর্মগুলো সেইসব মানুষের প্রবর্তিত, ঈশ্বর প্রবর্তিত নয়।


অপর দিকে, সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে বলা হয়েছে, "ধর্মোমূল হি ভগবান......" অর্থাৎ এই ধর্মের মূল বা প্রবর্তক হচ্ছে স্বয়ং ঈশ্বর। তাই এটাই হচ্ছে প্রকৃত ঈশ্বর নির্দেশি ধর্ম।

৩. সনাতন ধর্ম যে সত্য ধর্ম তার উল্লেখ কোন গ্রন্থে আছে? 

মুণ্ডক উপনিষদের ৩/১/৬ এ বলা হয়েছে,

সত্যমেব জয়তে নানৃতং সত্যেন পন্থা বিততো দেবযান।

য়েনাক্রমন্তৃষ্যয়ো হ্যাপ্তকামা যত্র তত সত্যস্য পরম নিধানম।।

অর্থাৎ সত্যের জয় ও অসত্যের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। সত্য পথের মাধ্যেমে প্রচীন কালে ঋষিগণ সেই পরম সত্যের কাছে গমন করেছেন।

এখানে দেখা যাচ্ছে, ঋষগণ যে পথ অনুসরণ করেছেন তাকে সত্য পথ বলা হয়েছে। ঋষিগণ নিশ্চয় সনাতন ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্ম পালন করেন নি। আরও বলা হয়েছে এই পথের মাধ্যমে পরম সত্য অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছে গমন করা যায়। তাই সনাতনই সত্য ধর্ম।

৪. আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ যে ঈশ্বর কর্তৃক প্রকাশিত তার উল্লেখ কোথায় আছে?

এই কথাটির উল্লেখ বেদ, উপনিষদ গীতায় অনেকবার উল্লেখ আছে। আমি শুধু বেদের থেকে উল্লেখ করছি।

শুক্লযর্জুবেদে (৩১/৭) বলা হয়েছে,

তস্মাদ্যজ্ঞাৎ সর্ব্বহুত ঋচঃ সামানি জজ্ঞিবে।

ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজু তস্মাদ জায়ত।।

অর্থাৎ সেই পরমপূজ্য পরমাত্ম হতে ঋক, সাম, অথর্ব ও যর্জুবেদ উৎপন্ন হয়েছে।

উদুত্যং জাতবেদসং দেবং বহন্তি বেতবঃ।

দৃশে বিশ্বায় সূর্য্যম্। ।

(অথর্ববেদ-১৩/২/১৬)

অর্থাৎ হে জগদীশ্বর! তুমিই বেদের উৎপাদক ও প্রকাশ স্বরূপ। সকলে তোমার মহিমা দেখার জন্য সংসারে পতাকার মতো কাজ করছে।

অংতি সন্তং ন জহাত্যস্তি সন্তং ন পশ্যতি ।

দেবস্য পশ্য ন মমার ন জীর্যাতি।।

(অথর্ববেদ-১০/৮/৩২)

অর্থাৎ, মানবগণ তাদের সমুবর্তী পরমাত্মাকে দেখে আবার তাঁকে ছাড়তেও পারে না। পরমাত্মার কাব্য বেদকে দেখো, তা মরেও না জীর্ণও হয় না।


৫. একমাত্র বেদ ও সনাতন ধর্ম সমগ্র মানব জাতির জন্য। তার প্রমাণ হচ্ছে.....

যথেমাং বাচং কল্যাণীমাব্দানি জনেভ্যঃ।

ব্রহ্ম রাজন্যভ্যাং শূদ্রায় চার্য্যায় চ স্বায় চারণায়।

প্রিয়ো দেবানাং দক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ভূয়াসম্য়ং মে কামঃ সমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু।।

(শুক্লযর্জুবেদ-২৬/২)

অর্থাৎ ঈশ্বর মানবের প্রতি উপদেশ দিচ্ছেন যে, আমি যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, শূদ্র, বৈশ্য, স্ত্রী, সেবকাদিদের মঙ্গলময় বেদ বাণী উপদেশ দিয়েছি তোমরাও সেই রকম তোমরাও সেইরূপ করো। বেদবাণীর উপদেশ দিয়ে আমি যেরকম বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেইরূপ হও। দানের জন্য আমি যেরূপ দানশীলদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরূপ হও। আমার ইচ্ছা বেদের প্রচার বৃদ্ধি হোক। সর্বজ্ঞান সম্পন্ন বেদবাণী গ্রহণ ও প্রচার করে মোক্ষ সুখ লাভ করো।

আমদের ধর্ম আমাদের শিক্ষা দেয় সকলের জন্য প্রার্থণা করতে, "সর্বে ভবন্তু সুখীন.....মা দুঃখ ভব্যতে।" বেদ আমাদের শিক্ষা দেয়, "তোমরা একসাথে চল, একসাথে আলোচনা করো। তোমাদের সকলের মন এক হোক, হৃদয় এক হোক। তোমরা একসাথে মিলে চল। তোমাদের লক্ষ্য সমান হোক, চিত্ত সমান হোক।" (ঋগ্বেদ-১০/১৯১/২-৪) 

এমন বিশ্বজনীন কথা সনাতন ধর্ম ছাড়া আর কোথাও নেই। তাই সনাতনই একমাত্র বিশ্বজনীন ধর্ম।


৬. সনাতন ধর্মের লক্ষ্য কী তা এবার বলছি.....

সনাতন ধর্মের মূল প্রাপ্তি হচ্ছে ঈশ্বর লাভ অর্থাৎ ঈশ্বরের সাথে একাত্ব হয়ে যাওয়া। যতক্ষণ না মোক্ষ লাভ হচ্ছে ততক্ষণ মানুষ জন্ম মৃত্যুতে আবদ্ধ থাকবে।

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ১/৭ ও গীতার ৮/১৫ তে বলা হয়েছে, সিদ্ধি প্রাপ্ত মহামানবগণ বেদ বর্ণিত সাধনার দ্বারা ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হন এবং জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হয়।" 

৭. সনাতন ধর্মে দেব পূজা নিষিদ্ধ নয়।

"যে যে সকামযুক্ত ভক্ত যে যে দেবতার স্বরূপকে শ্রদ্ধার সাথে পূজা করতে চায়, সেই সেই ভক্তের শ্রদ্ধাকে আমি সেই দেবতার প্রতি স্থির করে দেই। ঐ ভক্ত শ্রাদ্ধার সাথে যুক্ত হয়ে ঐ দেবতার পূজা করতে চেষ্টা করে আর সেই দেবতা থেকে আমারই বিহিত ফলাফল লাভ করে। " (গীতা- ৭/২১-২২)

দেবতাপূজার ফল স্বরূপ সর্বোচ্চ প্রাপ্তি হচ্ছে স্বর্গ। যেহেতু স্বর্গ মানবের স্থায়ি স্থান নয়, ওখান থেকে পূণ্য শেষ হলে মানুষকে আবার জন্ম গ্রহণ করতে হয়। সেইজন্য স্বর্গকে উপেক্ষা করা হয়। যারা স্বর্গ যেতে চায় তারাই দেবতা পূজা করে। এতে মানবের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি মোক্ষ লাভ হয় না। এই জন্য দেবতাপূজাকে অন্ধকারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। " কামনা বাসনা যুক্ত হয়ে যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে তারা নিজ স্বভাব অনুসারে অন্যান্য দেবতাদের পূজা করে।" (গীতা-৭/২০)

এথেকে বোঝা যায়, সনাতনে দেব পূজা নিষিদ্ধ নয়। দেবতাপূজায় শুধু মোক্ষ প্রাপ্তি হয়না।


৮. এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক, যারা বেদানুসারে ঈশ্বর উপাসনাও করে না আবার দেবতাপূজাও করে না তাদের কী হবে........

এই সম্পর্কে ঈশোপনিষদের ১২ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে,

অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যেহসম্ভূতিমুপাসতে।

ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভূত্যাংরতাঃ।।

অর্থাৎ যে মানুষগণ বিনাশশীল দেবতা মানুষ ইত্যাদির পূজা করে তারা অন্ধকারে প্রবেশ করে (যেহেতু তা মোক্ষদায়ী নয়)। কিন্তু যে মানুষগণ অবিনাশী ঈশ্বরের মিথ্যা উপাসনায় মত্ত, তারা আরও ঘোরতম অন্ধকারে প্রবেশ করে।

৯. যারা বেদ বিরোধী তাদেরকে কী বলা হয়েছে..... "পাষণ্ডস্থাংশ্চ মানবান"(মনুসংহিতা-৯/২২৫) অর্থাৎ বেদবিদ্বেষী ব্যক্তিরা হচ্ছে পাষণ্ড।

যারা ঈশ্বরকে উপাসনা করেনা তাদের সম্পর্কে গীতার ৭/১৫ তে বলা হয়েছে, "যারা আমার (ঈশ্বরের) ভজনা করে না তাদের জ্ঞান মায়া দ্বারা অপহৃত, অসুর, দূষিত কর্মকারী, নরাধম ও মূঢ়।"

১০. সনাতন ধর্মে অন্যদের ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জ.......

"বেদ অখিল ধর্মের মূল"- মনু.-২/৬।

"বেদ পিতৃগণ, দেবগণ ও মনুষ্যগণের পক্ষে সনাতন চক্ষু স্বরূপ। বেদ কোন মানুষের পক্ষে প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। মীমাংসাশাস্ত্র নিরপেক্ষভাবে ঐ বেদশাস্ত্রের তত্ত্ব অবগত হওয়া অসম্ভব, এটি স্থির সিদ্ধান্ত। "-মনু.-১২/৯৫।

এবার বৈদিক ধর্মগ্রন্থ ব্যতিত আর যেসকল তথাকথিত ধর্মগ্রন্থ আছে তাদের সম্পর্কে বলা আছে, "বেদবাহ্য যেসব গ্রন্থ আছে এবং যে সব শাস্ত্র কুদৃষ্টিমূলক অর্থাৎ অসৎ তর্কযুক্ত মতবাদ যুক্ত যে শাস্ত্র আছে, সেগুলি শেষ পর্যন্ত একেবারে নিষ্ফল এবং সেগুলো মানবকে তমযোনি অর্থাৎ অজ্ঞান জন্মে নিয়ে যায়। এই বেদাদি ছাড়া আর যত কিছু শাস্ত্র আছে সেগুলি মানবদ্বারা কল্পিত কালক্রমে উৎপন্ন। সেগুলো অর্বাচীন কাল ও মিথ্যা।" -মনুসংহিতা-১২/৯৫-৯৬


শেয়ার করে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিন


Collected

২৩.১১.২০

নমস্কার কি ?? এই নমস্কার কি সকলকে জানানো যায় ??

 নমস্কার কি ?? এই নমস্কার কি সকলকে জানানো যায় ??



নমস্কার বা নমস্তুতেবাঃ সংক্ষেপে নমস্তে হচ্ছে বৈদিকযুগ হতে প্রচলিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কর্তৃক ব্যবহৃত অভিবাদনসূচক শব্দ। সাধারণত দুই হাত জোড় করে ‘নমস্কার’ শব্দটি উচ্চারণ করা হয়ে থাকে বলে একে অঞ্জলি মুদ্রা বা প্রণামও বলা হয়।

‘নমস্কার’ শব্দটি এসেছে মূল সংস্কৃত শব্দ ‘নমঃ’থেকে যার আভিধানিক অর্থ সম্মানজ্ঞাপনপূর্বক অবনত হওয়া।


ইদানিং সনাতন ধর্ম বিরোধী নানা কুপ্রচারণার অংশ হিসেবে একশ্রেণীর কুচক্রী মহল প্রচার করে চলেছে যে , যেহেতু,নমস্কার শব্দটি অবনত হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট তাই সাধারণ জনগণকে নমস্কার জানানো উচিত নয় ।

দেখা যাক,এ সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্র কি বলে !

“যো দেবো অগ্নৌ যো অপসু যো বিশ্বং ভূবনাবিবেশ য ওষধীষু যো বনস্পতি তস্মৈ দেবায় নমো নমঃ॥”(শ্বেতাশ্ব তর উপনিষদ ২-১৭)

“যোগ যেমন পরমাত্মার দর্শনের সাধন বা উপায় ,নমস্কারাদিও অনুরূপ বলিয়া তাঁহাকে নমস্কার জানাই।”

তিনি কিরুপে?তিনি দেব অর্থাত্‍ পরমাত্মার প্রকাশভাব । তিনি কোথায়? তিনি আছেন অগ্নিতে,জলে,তৃণ -লতাদিতে, অশ্বাথাদি বৃক্ষে,তিনি এই বিশ্বভুবনে অন্তর্যামীরুপে অণুপ্রবিষ্ট হইয়া আছেন।”

তাই যখন কাউকে নমস্কার জানানো হয় তখন মূলত সর্বজীবে অন্তর্যামীরুপে অবস্থিত পরমাত্মাকেই প্রণতি নিবেদন করা হয় ,কোন মনুষ্যদেহকে নয় । সুতরাং,নমস্কার সকলকেই জানানো যায়।


দুইহাত জোড় মূলত অহম্ ত্যাগ পূর্বক বিনয়ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়।

সংস্কৃতিভেদে করজোড়ে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায় যেমন দেবতাদের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে সাধকরা মাথার উপরে দু’হাত জোড় করে থাকেআবার কোন ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাতে নমস্কার জানাতে বুকের বরাবর হাত জোড় করা একই সাথে পরমাত্মাকে প্রণতি ও আয়ুষ্মান (i.e.দীর্ঘায়ু কামনা) -কে নির্দেশ করে।


হরে কৃষ্ণ

[Collected] 

২২.১১.২০

ওঁ দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু এর অর্থ কি ??

 ওঁ দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু এর অর্থ কি ??




" ওঁ দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু "


☞অর্থ- তিনি দিব্যলোকে গমন করুক।

☞বাংলা(সে, সেই,তিনি,তাহা)

☞সংস্কৃত (স সঃ সা)

স-হল উভয়লিঙ্গ

সঃ- হল পুংলিঙ্গ

সা - হল স্ত্রীলিঙ্গ

তাই মৃত ব্যক্তিকে নারী পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবার উদ্দেশ্য বলতে হয়


" ওঁ দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু "


☞কিন্তু আজকাল আমরা সোশাল মিডিয়া বা আমাদের অনেকেই ভূল মন্ত্র উচ্চারণ বা লিখে থাকি তা হল..


ওঁ দিব্যান লোকান স্ব গচ্ছতু

স্ব অর্থ নিজে

তাহলে অর্থ হয়---

"দিব্যলোকে আমি গমন করি।"


এবার আপনিই বিচার করুন......


☞আসুন বেদে সেই মন্ত্রটি সম্পূর্ণ দেখি


“ওঁ কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্মং জানতা বাপ্য জানতা ।

মৃত্যুকাল বশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম্

ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম্

দহেয়ং সর্বগাত্রানি দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু”


অনুবাদঃ তিনি জেনে বা না জেনে অনেক দুষ্কর্ম করে থাকতে পারেন। কালবশে মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে। এ দেহ ধর্ম, অধর্ম, লোভ, মোহ প্রভিতি দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। হে অগ্নিদেব, আপনি তার সকল দেহ দগ্ধ করে দিব্যলোকে নিয়ে যান। ( ক্রিয়াকাণ্ড বারিধি)


আসুন আমরা সংস্কৃত শুদ্ধ উচ্চারণ করি নিজে জানব অপরকে জানাই।


ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ


[Collected]